বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, দোয়া-মোনাজাতসহ নানা কর্মসূচিতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়েছে।
আজ সোমবার সূর্যোদয়ক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে জাতীয় শোক দিবসের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সাথে নিয়ে যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকস্থ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তাবৃন্দ, কর্মচারী সমিতি, যবিপ্রবি ছাত্রলীগ, সাংবাদিক সমিতিসহ অন্যান্য পেশাজীবী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, হলসমূহ জাতির পিতার ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্যালারিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির কাছে শুধু কোনো নাম নয়, তিনি হলেন বাঙালির ভালোবাসার প্রতীক। সুতরাং তাঁর রেখে যাওয়া জনগণকে আমাদের ভালোবাসতে হবে। ভালোবাসা দিয়েই মানুষের মন জয় করতে হবে। তিনি সারা জীবন মানুষের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁর সেই ত্যাগের মহিমা এবং তাঁকে হারানোর যে শোক সেটিকে আমাদের শক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে আমাদের যথাসম্ভব সকল ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্বতা সাধন করতে হবে। আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।
আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য অধ্যাপক মো. রশিদুল হাসান। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে পৃথিবীর ইতিহাসে যে নৃশংস ঘটনা ঘটলো, এর ব্যর্থতার দায় আমাদের সকলের। জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার এ দায়মুক্তি আমাদের কোনো দিনই হবে না। কারণ ওই সময় অনেকে নীরব ও হতবিহ্বল ভূমিকা পালন করেছে। কেউ ভয়ে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেছে। আর কেউ ভোল পাল্টিয়ে খুনি মুশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছে। তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশ নয়, শুধু ঢাকার নেতা-কর্মীরা নেমে এলেই খুনিরা কেউ পালিয়ে যেতে পারত না। ১৬ আগস্টেই রাজপথে এর ফয়সালা হতো। পক্ষান্তরে কোনো নির্দেশনা না পেয়ে ক্ষোভে-দুঃখে সাভারে রক্ষীবাহিনীর দুজন সিপাহী আত্মহত্যা করে। অনেক মা-বোন বঙ্গবন্ধুর রূহের মাগফিরাত কামনায় রোজা রাখেন, নফল ইবাদত করেন। এভাবেই বঙ্গবন্ধু বাঙালির মধ্যে চির জাগরূক ছিলেন, থাকবেন। দীর্ঘ বক্তৃতায় তিনি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার যে নীলনকশা করা হয়, সেটি বর্ণনা করেন।
যবিপ্রবি ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো. আলম হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. আব্দুল মজিদ, ডিনস কমিটির আহ্বায়ক ড. মো. মেহেদী হাসান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. সেলিনা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ, গ্রন্থাগারিক (চলতি দায়িত্ব) স্বপন কুমার বিশ্বাস, কর্মচারী সমিতির সভাপতি শওকত ইসলাম সবুজ, যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সোহেল রানা, সাধারণ সম্পাদক মো. তানভীর ফয়সাল প্রমুখ। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন যবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব।
বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহিদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া-মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্বাবদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মো. আকরামুল ইসলাম। এ ছাড়া ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহিদের আত্মার শান্তি কামনায় যবিপ্রবির সনাতন পরিবারের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে (টিএসসি) বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করে।
যবিপ্রবি ছাত্রলীগের উদ্যোগে বিকেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনের (টিএসসি) সামনে স্থানীয় দুস্থদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়।
© স্বত্ত্বঃ ইঞ্জিনিয়ার্স ভয়েস: ২০১৭-২০২৪ --- “ইঞ্জিনিয়ার্স ভয়েস” এ প্রকাশিত/প্রচারিত যেকোন সংবাদ, আলোকচিত্র, অডিও বা ভিডিওচিত্র বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং নিষিদ্ধ।
Leave a Reply